
বেপরোয়া মোটর বাইক কেড়ে নিল অনেক ঘটনার নায়ক টারজান ওরফে মধুসূদন দাসকে। ট্রাফিক কন্ট্রোল ডিউটি করছিল, হাসপাতাল যাওয়ার পথেই তিনি দেহত্যাগ করেন।
ওঁনার আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।
টারজানের মৃত্যু প্রসঙ্গে আরো অনেক মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা মনে পড়ে গেল, তার সামান্য কিছুটা অংশ হয়ত আমরা অনুভব করতে পারব নিচের এই লেখনি থেকে। মাননীয় তপন রায় প্রধান বাবুর ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া নিচের অংশটি।
দৃশ্যপটে তিনটি যুবক
(সংবাদে প্রকাশ, ডুয়ার্স জঙ্গলে (Dooars Jungle) একটি পাহাড়িঝোরার পাশ থেকে পুলিশ তিন রাজবংশী যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। ওদের প্রত্যেকের বয়স– সাতাশ থেকে তিরিশের মধ্যে। স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে ওই তিন যুবকের দেহ এমনভাবে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে যে ওদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কেন এবং কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, পুলিশ তা জানাতে পারেনি। তবে পুলিশ অনুমান করছে, ওরা ‘কামতাপুরী জঙ্গি’। অপরপক্ষে ওই বনবস্তীর বাসিন্দাদের কেউ কেউ জানিয়েছে, দেহ উদ্ধারের আগের দিন সন্ধ্যায় দুটি গাড়িকে তাঁরা ওই ঝোরার দিকে যেতে দেখেছে। বস্তিবাসিদের বয়ান অনুযায়ী, গাড়ির আরোহিদের কারো কারো পরণে ছিল জলপাই রঙের পোষাক। পুলিশ অবশ্য এই তথ্যের সত্যতা মানতে নারাজ।)
সংবাদ সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৯ ডিসেম্বর, ২০০০ সাল
।। দৃশ্যপট এক ।।
তিন তিনটি যুবক —– সেদিন পাহাড়ঝোরার কোণে
তিন তিনটি যুবক —– সেদিন শাল-শিরীষের বনে
তিন তিনটি যুবক —– ছিল হাত বাঁধা তিনজোড়া
তিন তিনটি যুবক —– ছিল সাক্ষী চাঁদ ও তারা
তিন তিনটি যুবক —– ওদের ভূমিপুত্র নাম
তিন তিনটি যুবক —– ওদের কাগজে বদনাম
তিন তিনটি যুবক —– ওরা সাতাশ থেকে তিরিশ
তিন তিনটি যুবক —– ওরা দেখল চেয়ে শিরীষ
তিন তিনটি যুবক —– ক্রমে ঝাঁঝরা হলো বুক
তিন তিনটি যুবক —– ক্রমে আরশি ঢাকে মুখ!
।। দৃশ্যপট দুই ।।
স্বপ্ন দ্যাখে তিনটি যুবক আরশিতে মুখ ঢেকে
আরশিনগর পড়শি সেথা বসত করে কে কে
পড়শিকাকার কাঁধে ভ্রমণ ডাংগুলি দুইবেলা
সাতভাই বোন চম্পা মিলে গোলাপ-টগর খেলা
খেলতে খেলতে বালক-কিশোর-যুবক হওয়া ধানে
ডাক দেওয়া ডাকলক্ষ্মী মাকে ‘আকশোর হা’ গানে
পৌষ যেত ডাক দিকে ডাক পিঠে-পুলির গন্ধে
আটচালাতে বসতো আসর পালাগানের সন্ধে
সন্ধ্যা নামতো জামের ডালে লক্ষ্মীপেঁচার ডাকে
তুলসিতলায় মায়ের উলু দূরের কোনও শাঁখে
মাদুর পেতে পড়তো যুবক কুপির আলোয় ক খ
ভাতের গন্ধে স্বপ্ন মায়ের বাপের বেজায় শখও-
মস্ত হবে ছেলে আমার, রাখবে গ্রামের মান
কিন্তু যুবক স্বপ্ন দেখতো— করেনি পাঁচকান!
।। দৃশ্যপট তিন ।।
স্বপ্ন দেখতো তিনটি যুবক
সাতাশ আটাশ তিরিশ
কেন দাঁড়ায় গুলির মুখে
জানলো কেবল শিরীষ।
জল সরে যায় যুবার মুখে
সরছে চাঁদের রেখা
আর্তস্বরে শাল সে শুধোয়
খুব লেগেছে খোকা?
ভূমিপুত্র তিনটি যুবক
তিনজোড়া স্থির চোখে
ভূমির বুকে ঘুমায় আজও
ভূমির বুকেই জাগে!
————————-
সময়ের জড় ইতিহাস থাকে, সচেতন স্মৃতি থাকে না। সম্প্রতি ‘দোসর’ (Dosor) পেজে শ্রীকমলেশ রায়ের (Shri Kamalesh Roy) একটি ‘খোলা চিঠি’ (Khola Chithi) পড়ে স্মৃতির মুখ ফিরল ২০০০ সালের উল্লিখিত ওই খবরে; তাকে উপজীব্য করে আমার সেসময়ে প্রকাশিত এই লেখায়। আজ এখানে শেয়ার করছি। সঙ্গে, কমেন্টবক্সে দোসরের লিঙ্ক, কমলেশের লেখাটি পড়ার অনুরোধ জানিয়ে কেননা এমন ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী কমলেশ, ওঁর চিঠি।
Related Posts
[Documentary] Bengal’s Burden – by Patrick Brown 2011
কুচবিহার রাজপ্রাসাদের দ্বিতীয় ফটক / প্রবেশদ্বার ও প্রহরী কক্ষ। Second gate and guard room Coochbehar palace
কোচ রাজবংশী কামতা সংস্কৃতি, ভাষা নিয়ে বেলাগাম কটূক্তি – একপেশে পশ্চিমবঙ্গ সরকার?