অস্তিত্বের সংকট/ কোচ রাজবংশী সমাজে বিবাহের কিছু সীমাবদ্ধতা এবং নিষেধাজ্ঞা

কামতাপুরী কোচ রাজবংশী সমাজে বিবাহের সীমাবদ্ধতা –

  • ভাইবোনের বিবাহ বা কোনোরকম তুতো ভাইবোনের বিবাহ সমাজ কখনো অনুমোদন করে না। 
  • প্রথাগত বিবাহের দম্পতির ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিয়ে বা মায়ের, বাবার, ভাইয়ের, মামার, কাকার ধোকর ছেলে বা মেয়ের বিয়ে হয় না।
  • ঠাকুর্দা বা ঠাকুমাকেও বিয়েও অনুমোদিত নয় ।
  • ছোট ভাইয়ের বউ বা বিধবা (ভাউসানি)-র সঙ্গে কখনো বড় ভাইয়ের বিয়ে হবে না।
  • “আগ-কাল” বা “পাচ-কাল” এর ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সাধারণত বিয়ে হয় না।
  • “আগ-কল” আর ধোকর দের বিয়ে হয় না। 
  • রাজবংশীদের সঙ্গে মেচ, গারো, রাভা, পলিয়াদের বিয়েতে কোনো বাধা ছিল না, কিন্তু এইরকম বিয়ের সংখ্যা এখন কমে আসছে, প্রায় দেখাই যায় না। লেখক(ডঃ চারুচন্দ্র সান্যাল, 1965) জানতে পেরেছেন যে এখন কোনো রাজবংশী এইরকম বিয়ে করলে তাকে সমাজচ্যুত করা হয়। বর্ণহিন্দুদের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে।
  • মিস্তর/মিতর এর বোনের সঙ্গে বিয়ে হয় না।
  • মায়ের বোনের ধোকর বেটির সঙ্গে বিয়ে অনুমোদিত। 

কামতাপুরী /রাজবংশী ভাষা:

আগ-কাল= প্রথাগত বিয়ের সন্তানরা

পাচ-কাল= পুনর্বিবাহিত বিধবার সন্তান

ধোকর= মহিলা বিয়ে করলে আগের স্বামীর ছেলেমেয়েদের “ধোকর” বলে। 

মিস্তর/মিতর = বিয়েতে বরের বন্ধুসম কেউ মিতর/মিস্তর ধরে এবং আত্মীয়তায় আবদ্ধ হয় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।

 ভাউসানি= ছোট ভাইয়ের বউ

নিষেধাজ্ঞা কি কি ছিল?

  • হিন্দু রমণী, প্রথা অনুযায়ী নিজের স্বাম3নাম বা বয়জ্যোষ্ঠ যেমন বাবা এবং বড় দাদার নাম মুখে আনেন না। 
  • ছেলেরাও ছোট ভাইয়ের বউ (ভাউসানি) এর নাম ধরে ডাকেন না।  হিন্দু রমণী, প্রথা অনুযায়ী নিজের স্বাম3নাম বা বয়জ্যোষ্ঠ যেমন বাবা এবং বড় দাদার নাম মুখে আনেন না। 
  • নিজের বোনের ছেলের বউয়ের সঙ্গে কথা বলা বারণ, তার রান্না খাওয়াও বারণ। তাঁর উপস্থিতিতে ভাগনা বউ ঘোমটা টেনে থাকবে। মৃত্যুর পরেও সেই বউটিকে স্পর্শ করা বারণ। 
  • যদি সে কখনো তাঁকে ছুঁয়ে ফেলে বা যদি কখনো বড় ভাই ছোট ভাইয়ের বউকএ ছুঁয়ে ফেলে তবে দুজনায় অনুশোচনায় সারাদিন খাবে না। 
  • সন্ধ্যাবেলায় তুলসী তলায় “সেবা” দেবার পর তাদের খাওয়ার অনুমতি মিলবে। 

(তথ্যসূত্র: দি রাজবংশীস অফ নর্থবেঙ্গল, ডঃ চারুচন্দ্র সান্যাল, 1965) 

বর্তমান সময় সাপেক্ষে কিছু মন্তব্য:

কোচ রাজবংশীরা যতই শিক্ষিত হচ্ছে আর গ্রাম্য পরিবেশ থেকে শহুরে পরিবেশে আসছে ততই নিয়ম কানুনের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। মানলাম উপরুক্ত নিয়মের অনেক কটাই হয়ত অচল আজকের কসমোপলিটন পরিবেশে কিন্তু কিছু স্ট্যাটিক এবং স্বকীয় নিয়মকানুন আছে সেগুলোও পালন করা হচ্ছে না। বরং শহুরে পরিবেশে থেকে থেকে অন্যদের নিয়ম অনুকরণ করছে যা নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করার পথ প্রশস্ত করছে । গ্রামীন পরিবেশেও যে যুগের হাওয়া লাগেনি সেটা একেবারে বলা যায় না। তবে গ্রামে এখনো অনেক নিয়মকানুন পালন করা হয়। গোড়ামী কামতাপুরী কোচ রাজবংশী সমাজে কোনো কালেই ছিলনা এখনো নেই, এটা খুবই প্রশংসনীয়। যেমন বিধবা বিবাহ আগের থেকেই ছিল। আর বাংলায় বিধবা বিবাহের প্রচলন কে এবং কবে চালু হয় সেটা নিশ্চয় সবার জানা। 

নিচে একটি কামতাপুরী কোচ রাজবংশী বিয়ের সানাইয়ের ভিডিও শেয়ার করলাম Youtube থেকে।

3 thoughts on “অস্তিত্বের সংকট/ কোচ রাজবংশী সমাজে বিবাহের কিছু সীমাবদ্ধতা এবং নিষেধাজ্ঞা”

  1. রাজবংশী রা কখনো টোপর পরে বিয়ে করত না এটাঝ একটা প্রথা

    1. নতুন তিনটা নাম জানিলুং “আগ-কলা”, “পাচ-কলা”, “ধোকর”। থ্যাঙ্কস।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.