(সাগাই সোদোর ড্যাক)
কামতাপুরী কোচ রাজবংশীরা তাদের কামতাপুরী /রাজবংশী ভাষায় এমন কতগুলি নাম/সম্বোধন ব্যবহার করেন যা বাংলা ভাষী তথা বাংলা সংস্কৃতি মানুষদের থেকে পুরোপুরি আলাদা। মাতৃস্থানীয় বা জনননীকে মান্য বাংলায় “মা” বলা হয়, কিন্তু কোচ রাজবংশীরা বলেন “আঈ বা আঈও” । মায়ের মাকে মান্য বাংলায় বলে দিদিমা/দিদা, কামতাপুরী/ রাজবংশী ভাষায় বলে “আবো”। কিন্তু মায়ের বাবাকে যেখানে চলতি মান্য বাংলায় বলে “দাদু” কামতাপুরী ভাষায় সেখানে বলে “আজু”; বাবার মা, চলতি মান্য বাংলায় বলে ঠাকুমা কামতাপুরী /রাজবংশী ভাষায় সেখানে বলে বড়াই/বড় আঈ। কামতাপুরী /রাজবংশী ভাষায় যেখানে বিবাহিত স্ত্রী কে “মাইয়া, বোনুশ, গিত্তানী, ঘরণি” ডাকা হয়, সেখানে মান্য বাংলায় বিবাহিত স্ত্রীকে বলে “বউ বা স্ত্রী” । কামতাপুরী /রাজবংশী ভাষায় “মাঈ/মাঈও আর মাইয়া” এই দুটি শব্দের বিশেষত্ব হল মাঈ শব্দের দ্বারা কন্যা বা সমকক্ষকে বোঝায় আর মাইয়া শব্দটি বউ বা স্ত্রীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়; এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মান্য বাংলায় দিদি আর দিদা যেমন শুনতে বিপরীতার্থক মনে হলেও দুটো শব্দের মানে পুরোপুরি আলাদা।
কামতাপুরী /রাজবংশী ভাষায় বর কে “ভাতার” বলে। বাংলার অনেক জাগাতেই এই ডাকটির চল আছে। শব্দটির মানে যে ভাত দেয় বা দেখভাল করে সম্ভবত। যে স্ত্রীলোকের স্বামী জীবিত, চলতি মান্য বাংলায় তাকে বলে সধবা; কামতাপুরী /রাজবংশী ভাষায় তাকে বলে “ভাতারি”। স্বামী মারা গেলে কামতাপুরী ভাষায় বলে বিধুয়া/আরি যা চলতি মান্য বাংলায় বলে বিধবা। অবিবাহিত মেয়েকে কামতাপুরী ভাষায় বলে “আ – কুয়ারী” , চলতি বাংলায় যেখানে “কুমারী” বলা হয়। আ শব্দ টি এখানে আঈ এর সংক্ষিপ্ত রুপ। ছোটো মেয়েদের মা বা মাঈ বলে ডাকা হয়।
ভাইদের ক্ষেত্রে কামতাপুরী ভাষায় ভাই কে বলে “মাঝকিলা, ছোটো মাঝকিলা “যা বাংলাতে বলে “মেজো ভাই আর সেজো ভাই” যথাক্রমে। কামতাপুরী ভাষায় বড় ভাইয়ের বউকে “ভোজী” বা “ভাউজি’ বলে সম্বোধন করা হয়, মান্য বাংলায় বড় ভাইয়ের বউকে বলে” বউদি”। ছোটো ভাইয়ের বউকে যেখানে কামতাপুরী /রাজবংশী ভাষায়” ভাউসানী/ভাউমানী” বলে সেখানে বাংলায় ছোটো ভাইয়ের বউকে বলে “বউমা”।
কামতাপুরী /রাজবংশী ভাষায় একটা বিশেষ সম্বোধন হল” মশায়/বরধনা” (জায়গা বিশেষে অবশ্য তফাৎ আছে) যা বউ এর বড় ভাইকে ডাকা হয়। আর বরের বড় ভাইকে “ভাশুরই” বলে যা মান্য বাংলাতেও একই, কিন্ত বউ এর বড় ভাই হল” সম্বন্ধী”, মান্য বাংলায়।
বড় ছোটো সব মেয়ের বর কে কামতাপুরী ভাষায় “জাঙোই” বলে যা চলতি মান্য বাংলায় বলে জামাই। বড় বা ছোটো ভাইয়ের বউ এর বাবাকে “তায়ই” আর মাকে “মায়ই” বলে সম্বোধন করা হয় কামতাপুরী ভাষায়, উল্টোদিকে দিদি বা বোনের বরের বাবা আর মাকেও একই সম্বোধন করা হয়; মান্য বাংলায় সাধারনত “মেসোমশায়/কাকু” আর মাসি/কাকিমা” বলে সম্বোধন করা হয়। পূর্ণবয়স্ক অবিবাহিত ছেলেকে বলে “ঢেনা”, এই শব্দ মান্য বাংলায় নেই। কামতাপুরী /রাজবংশী ভাষায় আরো অনেক সম্বোধন আছে যেগুলি চলতি মান্য বাংলা সংস্কৃতিতে নেই বললেই চলে- যেমন ছেলের বন্ধুর বাবা হচ্ছে “সোংরা” আর মা হচ্ছে “সুংরি”, বন্ধুর ছেলে হচ্ছে “সমন বেটা” আর মেয়ে “সমন বেটি”।
কামতা সংস্কৃতিতে আরো যেসকল সম্বোধন আছে সেগুলি হল-
দাদা, উত্তরদিনাজপুরের এমন কেনে মুই তো বুঝপায় নি পাচু
জেলা থাকি জেলা vary করে। গ্রাম থাকি শহরত বসবাস করিলে, আগের প্রজন্ম গেরামত পরের প্রজন্ম টাউনত, খোনো পরিবার চাকরী সূত্রে বায়রাত থাকি তারপরে নিজের জাগাত আসিলে, অন্য সংস্কৃতির মানষির সাথত একসাথে বসবাস করিলে তার প্রভাব।।। এই নাকান ভাবে ড্যাকের পরিবর্তন হয়। মোর 6 জামাইবাবু বা বনু। তিনজনক জামাইবাবু ড্যাকাং তিনজনক বনু ড্যাকাং। গেরামের বৌদিলাক ভাউজি আর টাউনের শিক্ষিত বৌদিলাক বৌদি করি ড্যাকাং। কারন ভাউজি কৈলে উমরা হয়ত বুঝিবারে পাইবে না।
কিন্তু দাদা, উত্তর দিনাজপুরের রাজবংশীলা কি বাঙালিদের অনুসরণ করচে নাকি , একেবারেই আলাদা মোক মনে হল । মা কে মা বলি, বাবার মাকে দাদি, ও বাবা কে দাডো, মায়ের মা কে নানি , মায়ের বাপ কে নানা , বাবার ভাইকে কাকা, বাপের ভাইকে বড়বা ।
আরও অনেক লার মিল পানুনি মুই ।
ওটে বাঙালির পারভাব বেশী আর রাজবংশীলাও নিজেরটা ছাড়ি উমারটা অনুকরণ করা শুরু করিচে। এইটা বন্ধ করি উচিত