আর কয়েকদিন পরেই কোচবিহারের ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা শুরু হতে চলেছে। 1812 সালে কোচবিহারের মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ সর্বপ্রথম রাসযাত্রা চালু করেন। 1773 সালে স্বাধীন কোচবিহার রাজ্য ব্রিটিশের করদমিত্র রাজ্যে পরিনত হওয়ার পর 1785 সাল পর্যন্ত নাজির দেও খগেন্দ্রনারায়ণ রাজ্য পরিচালনা করেছিল ব্রিটিশের তত্ত্বাবধানে। মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ সম্পুুর্ণরূপে রাজ্যের দায়িত্ব ভার গ্রহন করেন 1801 সাল নাগাদ। তার পরে পরেই অর্থাৎ 1807 সালে কোচবিহারের সাগরদিঘী খনন করা হয়, ঐ সময়কালে হিরন্যগর্ভ মন্দিরও প্রতিষ্ঠা করা হয়়।



রাসমেলার প্রসঙ্গে বলতে গেলে সব থেকে আগে যার কথা মনে আসে তিনি হলেন কোচবিহারের তোর্ষাপাড়ের হরিনচওড়ার আলতাফ মিঞা। বংশ পরম্পরায় তার পরিবার রাসচক্র নির্মান করে চলেছে। এবছরও তিনি কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কোচবিহারের এক বিশেষ ঐতিহ্য হল ভিন্ন ধর্মের প্রতি আর ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি সহমর্মিতা। কোচ রাজবংশী সমাজের বিশেষত্বও বলা যেতে পারে। স্থানীয় মুসলিম বা নস্যশেখ সাধারনত কোচ রাজবংশী বংশোদ্ভূত।
আলতাফ মিঞার পরিবার মুসলিম হলেও বংশগত ভাবে তার পরিবার মদনমোহন মন্দির চত্বরের রাসচক্র নির্মান করে চলেছে। আলতাফ মিঞার দাদু মামুদ মিঞা শুরু করেছিলেন রাসচক্র নির্মানের কাজ তারপরে ওনার ছেলে আজিজ মিঞা এই কাজ করেছেন। কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্টের অস্থায়ী কর্মী আলতাফ মিঞা প্রায় 14 বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তার সংসারের অবস্থা।
প্রতিবছর দেখা যায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিরা মহাধুমধাম করে রাস উদ্বোধন করেন অথচ আলতাফ মিঞাদের দিকে ফিরে তাকানোর কেউ নেই। যদিও এই রাসচক্রের উদ্বোধন বা পূজো দেওয়ার নিয়ম একান্ত রাজপরিবারের বা রাজপরিবারের নিকট আত্মীয়দের হওয়ার কথা। কিন্ত মহারাজা জগদীপেন্দ্রনারায়ণের মৃত্যুর পর রাজ্য সরকার এখানেও হস্তক্ষেপ করে অন্যায়ভাবে নিয়মকানুন পরিবর্তন করে কোচবিহারের ডিএম সাহেব কে দিয়ে রাস উৎসব উদ্বোধন করান যা কোচবিহারের কোচ রাজবংশী সমাজ বিভিন্ন সময়ে এর পরিবর্তনের দাবী জানিয়ে আসছে, রাজপরিবারের নিকট আত্মীয়রাও সরকারকে অনুরোধ করেছিল, সোসাল মিডিয়াতেও এই নিয়ে অনেক হৈচৈ হয়েছে। গত বছর কোচবিহারের ডিএম সাহেব পাগরী পরে রাস উদ্বোধন করেন যা কম্মিনকালেও কেউ দেখেনি কোচবিহারবাসী। এর মাধ্যমে উনি কি বার্তা দিতে চেয়েছিলেন তা উনিই জানেন।



আর্থিক দৈন্যতা সত্বেও আলতাফ মিঞা এই কাজ করে আসছেন। লক্ষ্মী পূজার দিন রীতিমত উপোস করে এই কাজ শুরু করেন আর দীর্ঘ 1 মাস ধরে এই কাজ করেন তিনি। কাগজ, বাঁশ আর কাঠ দিয়ে এই চক্র বানান তিনি। যেহেতু পরম্পরাগত ভাবে তার পরিবার এই কাজ করে আসছে সেহেতু এই কাজের মধ্যে তার আবেগ জড়িয়ে আছে, যৎসামান্য দক্ষিণা নিয়ে তিনি এই কাজ করছেন যা দিয়ে সংসার চালানো দায়। তবে তার পরবর্তী প্রজন্ম এই কাজ করবে কিনা এই নিয়ে সংশয় অবশ্যই আছে।
View All Posts | আপনিও পোস্ট করুন | Advertise your Product or Service |
One reply on “রাসচক্র নির্মাতা আলতাফ মিঞা দের দিকে তাকানোর কেউ নেই।”
super