মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের সাহিত্যকীর্তি । King Nripendranarayan as Poet

poet nripendranarayan

“কাচুয়া”, যাকে আদর করে ডাকতেন তার দিদি  আনন্দময়ী দেবী (কামতাপুরী ভাষায় কাচুয়া ছাওয়া মানে হল বাচ্চা বা ছোট্ট শিশু) সেই ছোট্ট মহারাজার জীবনে যে এত কর্মকান্ড ছিল তা কোচবিহার তথা ভারতবাসীর কাছে অজানাই রয়ে গেছে। হয়ত বা কোনো এক বিশেষ কারণবশত তা অগোচরে রাখা হয়েছে কোচবিহারবাসী তথা ভারতবাসীর কাছে। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ নিজে সুকবি ছিলেন। Good Words নামে একখানি ইংরাজী কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছিলেন কিন্তু তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এই গ্রন্থটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।

১৯০৮ খ্রীষ্টাব্দে তিনি তাঁর বিখ্যাত শিকার কাহিনী “Thirty Seven Years of Big Game Shooting in Cooch Behar, the Duars and Assam: A Rough Diary by the Maharaja of Cooch Behar” গ্রন্থটি রচনা করেন। এই গ্রন্থটি মুম্বইয়ের টাইমস প্রেস থেকে মূদ্রিত হয়েছিল পুরোপুরি আর্ট পেপারে। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ তাঁর শেষ জীবনে ইংল্যান্ড যাবার পূর্বমুহূর্তে রচিত একটি কবিতায় ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলি প্রকাশ করে যা পাঠকের মনে দাগ কেটে যায়-

I have done my share of pastime,

And I have done my share of toil,

And life is short, the longest life a span;

I care not now to tarry for the corn

Or for the oil or for the wine that

Maketh glad the heart of man.

For good undone and gifts misspent

And resolutions vain

“Tis somewhat late to trouble;

This I know I should live the life once,

If I had to live again, and the

Chances are I go where most men go.

মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের সাহিত্য চর্চা বিষয়ে আর বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে তিনি দেশ বিদেশে সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া ও ভারতীয় সঙ্গীত সমাজের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের মৃত্যুতে কলকাতার অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ, বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, ইন্ডিয়া ক্লাব ও ভারতীয় সঙ্গীত সমাজ বন্ধদিবস পালন করে। তবে এখন হয়ত কোনো প্রতিষ্ঠানই আর তাঁর অবদান মনে রাখেনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোনোদিনই তাঁর মহান অবদানকে স্বীকার করে নি বা গুরুত্ব দেয়নি যতটা কলকাতা বা তার পার্শ্ববর্তী মনিষীদের তুলে ধরেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিবর্তে কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম পরিবর্তনে রত থাকে। উদাহরণস্বরূপ মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ হাসপাতাল এর নাম পরিবর্তন করে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল রাখা হয়েছে, অতীতে আরো অনেক ঘটনাবলীর সাক্ষ্য আছে। হয়ত তিনি তথাকথিত বাঙালী ছিলেন না বলে তাঁর প্রতি ও সমগ্র কোচ রাজবংশী কামতাপুরী মানুষকে অন্যভাবে দেখা হয়, পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখার এক অদৃশ্য প্রয়াস থাকে যা বর্তমান প্রজন্ম কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পেরেছে।  কোচবিহারে প্রতিষ্ঠিত তাঁর শিক্ষালয় গুলো কখনো বন্ধদিবস পালন করেনি বা এখনো করেনা। সরকারী কোনো নির্দেশিকাও নেই। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ রয়াল কলোনিয়াল সোসাইটি, সোসাইটি ফর এনকারেজমেন্ট অফ ইন্ডিয়ান আর্টস এবং সোসাইটি ফর আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স এর ফেলো ছিলেন। এছাড়াও তিনি পাস্তুর ইন্সটিটিউট, ইন্ডিয়ান সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন ইত্যাদি অনেক প্রতিষ্ঠানের সদস্য ছিলেন। ৩১ শে বৈশাখ ১৩২৫ বঙ্গাব্দে কোচবিহারে ল্যান্সডাউন হলে কোচবিহার সাহিত্যসভার একটি বিশেষ অধিবেশনে তাঁর স্মরণসভায় মহারাণী সুনীতি দেবী ‘মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের সাহিত্যিক জীবন’ নামে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন। পরবর্তীকালে আনুমানিক ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের দিকে প্রবন্ধটি পুণ্যস্মৃতি নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত এবং স্বর্গীয় মহারাজা নূপেন্দ্রনারায়ণের স্মৃতিতে উৎসর্গ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। সেই গ্রন্থেরও
কোন হদিস পাওয়া যায় নি। 

তাঁর মৃত্যুর পর The Pioneer’ পত্রিকা মন্তব্য করে, .. he had a very good voice for singing, he was a most capable stage-manager of amateur theatricals… . He was well-known to be one of the most perfect waltzers in society, but his heart was above all things in manly sports and games.” 

তাঁর মৃত্যুর পর মিনার্ভার নাট্যাচার্য্য অমৃতলাল বসু ১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর চার অঙ্কের” “নবযৌবন” নাটকটি স্বর্গীয় কোচবিহার রাজ্যপতি মহারাজ কর্ণেল স্যার নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুরের পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন ।

Courtesy: S.K. Roy

মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের শিকার যাত্রা

follow kamatablog