কেন শুধু রাজবংশী না বলে কোচ রাজবংশী বলা হয়। ঐতিহাসিক দলিল।

VSarkar
রাজবংশী না কোচরাজবংশী?

রাজবংশী জাতির ইতিহাস : ঐতিহাসিক দলিল
By Mrinmay Barman

কামরূপ অঞ্চলের রাজবংশী জাতির ইতিহাস নিয়ে অনেক লোক কথা , কল্পনা তত্ব প্রচলিত । সেই সঙ্গে আছে অনেক প্রমাণ যোগ্য ইতিহাস , ঐতিহাসিক দলিল । সেই ইতিহাস আরো ঐতিহাসিক দলিল নিয়ে আজকের ক্ষুদ্র আলোচনা যা বিজ্ঞানমনষ্ক , ইতিহাস সচেতন পাঠক বর্গকে উৎসাহিত করবে ।

১. ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে ইক্তিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজি কামরূপের উপর দিয়ে তিব্বত আক্রমণ করেন । ১২৬১ সালে সেই কাহিনী প্রকাশিত করেন মিনহাজ ” তবকত ই নাসিরি ” তে । এই পুস্তক অনুসারে কামরূপ অঞ্চলে শুধু কোচ মেচ ও থারু জাতির উল্লেখ পাওয়া যায় ।

২. ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বণিক রাউল ফিচ এই অঞ্চলে আসেন এবং এই কামরূপ অঞ্চলকে কোচ জাতির দেশ “কোচ দেশ ” আর মহাবীর চিলা রায় কে” শুক্ল কোচ ” হিসেবে লিপিবদ্ধ করেন ।

৩. ষোড়শ শতকের শেষে এবং সপ্তদশ শতকের শুরুতে সংকলিত তারিখে ফেরেস্তা, আকবর নামা , বহারিস্থানে ঘায়বী , তজকে জাহাগীরী পুস্তকে এই অঞ্চলকে “কোচ দেশ” হিসাবে লিপিবদ্ধ করা আছে । এই অঞ্চলের অধিবাসীদের কোচ হিসেবে বর্ণিত আছে।

৪. সপ্তদশ শতকের লেখা শাহজাহান নামা , বাদসহনামা , তারিখে আসাম , আলমগীর নামা গ্রন্থে এই অঞ্চলকে কোচ জাতির কোচ দেশ হিসাবে উল্লিখিত আছে ।

৫. বুকানন হ্যামিল্টন এর ” অ্যাকাউন্ট অফ্ দা ডিস্ট্রিক্ট অফ্ রংপুর ,১৮১০ ” অনুসারে উল্লেখ করা আছে যে রাজবংশী জাতির মূল কোচ জাতি। ওই রিপোর্টে আরো বলা আছে যে সব রাজবংশী কোচ নয় কিন্তু অধিক অংশই কোচ ।

৬. ইংরেজ গবেষক বি.এইচ হজসনের ” জার্নাল অফ্ দা এসিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল , ১৮৪৯” মতে কোচ ও রাজবংশী একই নরগোষ্ঠি ভুক্ত ।

৭. ই. টি. ডাল্টন এর ” ডেসক্রিপটিভ এথনোলজি অফ্ বেঙ্গল ১৮৭২ ” বইয়ে উল্লেখ করেন যে রাজবংশী রা অনার্য বংশোদ্ভূত দ্রাবিড় বা বৃহৎ বড়ো নৃ গোষ্ঠীর অন্তর্গত ।

৮. এইচ . বেভারলির ” সেনসাস রিপোর্ট অফ্ বেঙ্গল ১৮৭২ ” মতে রাজবংশী নাম ভিত্তিহীন । রাজবংশী রা আসলে কোচ এবং পলিয়া দের সমগত্র।

৯. হান্টারের মতে ” স্ট্যাটিসটিকাল অ্যাকাউন্ট অফ্ দার্জিলিং , জলপাইগুড়ি অ্যান্ড কোচবিহার ,১৮৭৬ ” কোচ রা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে কোচ নাম ত্যাগ করে রাজবংশী হিসাবে পরিচিত ।

১০. এইচ . বি. রওনি তার গ্রন্থ ” ওয়াইল্ড ট্রাইব অফ্ ইন্ডিয়া ১৮৭২” বলেছে যে কোচ জাতির হিন্দুকৃত একটি বৃহৎ অংশ রাজবংশী হিসাবে পরিচিত ।

১১. ও .ড্যানিয়েল ” সেনসাস রিপোর্ট অফ্ ইন্ডিয়া ১৮৯১ ” উৎপত্তির দিক থেকে রাজবংশী দের মঙ্গোলিয়ান নরগোষ্ঠির উল্লেখ করেছেন ।

১২. এইচ. এস . রিজলে ( দা ট্রাইব অ্যান্ড কাস্ট অফ্ বেঙ্গল ,১৮৯১) স্পষ্ট উল্লেখ করেন যে রাজবংশী রা রাজবংশী নামের অন্তরালে কোচ মাত্র ।

১৩. ই. এ. গেইট ( সেনসাস রিপোর্ট অফ্ বেঙ্গল ১৯০১) এর মতে রাজবংশী রা আসলে কোচ ।

১৪. জর্জ আব্রাহাম গিয়ারসন এর ” লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ্ ইন্ডিয়া ১৯০৪ ” এর মতে কোচ ও বোরো উৎপত্তির দিক থেকে একই নর গোষ্ঠীর । রাজবংশী রা হিন্দুকৃতা কোচ ।

১৫. ও. ম্যালে ( সেনসাস রিপোর্ট অফ্ বেঙ্গল ১৯১১ ” ক্ষত্রিয় আন্দোলনের চাপে কোচ ও রাজবংশী কে দুটি পৃথক জাতি হিসাবে লিপিবদ্ধ করেন ।

১৬. আচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় রাজবংশী দের বৃহত্তর বোরো নর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করেন । কোচ এবং রাজবংশী দের একই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেন।

১৭. বর্তমানের রাজবংশী বিষয়ক গবেষক দেবেন্দ্র নাথ বর্মার মতে ( উপনিবেশিক বাংলায় রাজবংশী জনগোষ্ঠীর জাতি পরিচিতি প্রসঙ্গ ) রাজবংশী জাতি কোচ , রাজবংশী , পলিয়া , দেশীয় জনগোষ্ঠীর মিশ্রণ। রাজবংশী রা বৃহৎ বোরো নৃ গোষ্ঠীর অন্তর্গত।

১৮. ড. দীপক কুমার রায়ের মতে ( রাজবংশী সংস্কৃতির গোড়াসির কথা ) রাজবংশী জাতির মূল কোচ জাতি । রাজবংশী রা আসলে হিন্দু কৃত কোচ ।

১৯. ঐতিহাসিক শিবেন্দ্র নারায়ান কোচের মতে ( ” কোচ জাতির অতীত সন্ধানের খোঁজ “) কোচ আরো রাজবংশী একই । কোচ নামের সীমা সংখ্যা নেই । উত্তর পূর্ব ভারতের নানান জায়গায় তারা নানান নামে পরিচিত ।

২০. ড. সুখাবিলাস বর্মার মতে ” ভাওয়াইয়া ” রাজবংশী রা বৃহত্তর বোরো নৃ গোষ্ঠীর অন্তর্গত ।