জালধোয়া দুর্গ – Jaldhoa Fort of Vir Chila Ray / Tufanganj
হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস
জালধোয়া দুর্গ বা চিলা রায়ের জালধোয়া দুর্গ (Jaldhoa Fort of Chila Ray) নামটি বা এলাকাটি আমাদের অনেকের কাছে খুবই অপরিচিত।অথচ এই দুর্গটির সঙ্গে ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে কুচবিহার রাজবংশের প্রাচীন ইতিহাসের অনেক কাহিনী। খুব কমসংখ্যক লোক জানে এই দুর্গটির সম্পর্কে। এটা আমাদের ইতিহাস অজ্ঞতার ফল, আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে আমরা উদাসীন।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে কতটা গুরুত্ব ছিলো এই দুর্গটির? আমরা মহারাজকুমার শুক্লধ্বজ নারায়ণ ওরফে চিলা রায় ও তার দুর্গ চিলা রায়ের কোট (অন্দরানফুলবাড়ী) নিয়ে অনেক চর্চা, আলোচনা করেছি। কিন্তু তার অপর দুর্গ বা প্রাসাদ তুফানগঞ্জ মহকুমার রামপুর-২ নং অঞ্চলে যে অতীতে ছিল তা নিয়ে আমরা কোনদিনই খুব একটা ভাবিনি বা অনুসন্ধান করিনি বা চেষ্টাও করিনি। ফলস্বরূপ চিলা রায়ের দুর্গের নাম অনুসারে এলাকার নাম হলেও দুর্গের আর অস্তিত্ব বলে কিছু নেই। অথচ এই মহাকুমার সবথেকে প্রাচীন পুরাকীর্তির নিদর্শন ছিল এই দুর্গটি।অন্দরানফুলবাড়ীর চিলা রায়ের কোট এর সমসাময়িক (হতে পারে আগে অথবা পরে/সময়ের ব্যবধান খুব বেশি হবে না ) এই দুর্গটি রাজ্য রাজধানীর পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় ভৌগোলিক কারণে এই জালধোয়া দুর্গের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
আমরা যদি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দেখি, মহারাজ নরনারায়ণ তার রাজ্যকে সাম্রাজ্যে পরিণত করেছিলেন তার ভাই চিলা রায়ের হাত ধরে। অসম, ভুটান, ত্রিপুরা, জয়ন্তিয়া ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই সাম্রাজ্যের পরিধি ছড়িয়ে পড়েছিল। বীর চিলা রায়ের রাজ্য জয় থেকে সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে এই দুর্গটি ব্যবহার করেছিলেন বা এই দুর্গের বিশেষ ভূমিকা ছিল (যদিও অনুসন্ধান সাপেক্ষ) তা বলাই বাহুল্য। ভৌগোলিক কারণ ও গঠনশৈলীর বৈশিষ্ট্য প্রাচীন ঐতিহাসিক এই নিদর্শনটির অস্তিত্ব আর নেই। রায়ডাক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে দুর্গটি।
জালধোয়া দুর্গের সময়কাল
কুচবিহার রাজ্যের পুরাসম্পদের অন্যতম নিদর্শন জালধোয়া দুর্গটি চিলারায় কতৃর্ক নির্মিত হয়েছিল আনুমানিক ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। বিভিন্ন বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকেও জানা যায়, সেই সময় দুর্গগুলি তৈরি হয়েছিল বাঁশ-বেত কাঠ, খড় দিয়ে।শত্রুপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করা ও বাণিজ্যিক কারণে এই দুর্গটি তৈরি হয়েছিল রায়ডাক নদী তীরে ।এরকমও শোনা যায়, অসমীয়া বৈষ্ণবগুরু শংকরদেব এই দুর্গে এসেছিলেন এবং চিলারায়কে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা দিয়েছিলেন (অনুসন্ধান সাপেক্ষ)। যদিও বেশির ভাগ মতে, অন্দরানফুলবাড়ীর দুর্গে চিলারায় দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন বৈষ্ণব গুরু শংকরদেব এর কাছে।

তুফানগঞ্জ মহকুমার রামপুর অঞ্চলের (Rampur-II, Tufanganj) ঐতিহাসিক এই জায়গাটির আজ আর কোনো গুরুত্ব নেই বললেই চলে। জনবসতি স্থাপন ও ক্রমাগত নদী ভাঙ্গন এই এলাকার প্রাচীন ইতিহাসকে মুছে ফেলেছে। রামপুর-২ নং অঞ্চলের অনেক বাসিন্দাও অবগত নন এই দুর্গটির সম্পর্কে। যদিও ওই এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা টোনেয়া মিঞা বলেন, বর্তমান বিশ্বাসপাড়া এলাকায় একটি দুর্গ ছিল, তিনি তার পূর্বপুরুষের কাছে একথা শুনেছেন। এলাকার শ্রমিকরা বিভিন্ন সময়ে মাটি কাটতে গিয়ে মাটির নিচে অনেক সময় শক্ত ঢিবি, ইটের টুকরো দেখতে পান।
সময়ের ব্যবধানে সব কিছু হারিয়ে গেলেও প্রাচীন ইতিহাসের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলা যায় না। অনুষন্ধিৎসু গবেষক, পুরাকীর্তি বিশেষজ্ঞ এবং সরকারি প্রচেষ্টায় ঐতিহাসিক এই জায়গাটির যথার্থ অনুসন্ধান সাপেক্ষে গবেষণা করে পুরাতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে যদি কিছু করা যায় কিনা, তা একবার ভেবে দেখা যেতে পারে। আমারও ব্যক্তিগত মতে, প্রাচীন এই ঐতিহাসিক জায়গার হারানো ইতিহাস উদ্ধার করার উদ্যোগ গ্রহণ করে জেলা পর্যটন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
Read More
Vir Chila Ray (Chilarai) – The Great Warrior
ঐতিহাসিক রাজসম্পদ বেদখল – তুফানগঞ্জ
বিশ্ব মহাবীর চিলা রায় ও কামতা সাম্রাজ্য।
চিলারায় গড়, স্মৃতি রোমন্থন ও কিছু তথ্য।
তুফানগঞ্জের মানষি এলাও নিন্দত আছে।
কি রহস্য তুফানগঞ্জে বীর চিলারায় এর মূর্তি ভাঙার পিছনে?
Related Posts
অস্তিত্বের সংকট/ কোচ রাজবংশী সমাজে বিবাহের কিছু সীমাবদ্ধতা এবং নিষেধাজ্ঞা
VE MAAHI ||covered by Manashi Sahariah||
কামতা কোচবিহারত রচিত শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের বেশীরভাগ গ্রন্থলার নাম।