ইতিহাস – ঐতিহ্যের চরম অবহেলা

কুচবিহার শহরের প্রাচীন জনপদ দেবীবাড়ি, নতুন সংযোজিত নাম দেবীবাড়ি নতুনপাড়া মোড়ে (Debibari Notun Para) কুচবিহার রাজপ্রাসাদের দ্বিতীয় ফটক /প্রবেশদ্বার এবং প্রহরীর কক্ষের (second gate and guard room of Coochbehar palace) বর্তমান অবস্থা দেখে রাজার শহর, রাজনগর, হেরিটেজ শহর এর প্রকৃত অবস্থা অনুমান করা যায়। সারি সারি অট্টালিকা, ঘন জনবসতি, উদাসীনতা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তিল তিল করে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক সম্পদ দুটি। সরকারি যথোপযুক্ত পদক্ষেপের অভাবে, জনগনের অসচেতনাতায় ও সম্পদের গুরুত্ব না বোঝা এর অন্যতম কারণ। কেন্দ্রীয় সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ (ASI), রাজ্য সরকার এই বিষয়ে অনেক আগেই সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল।

রাজ নিদর্শন, স্থাপত্য, সম্পদ, ইতিহাস ও রাজ কীর্তিকলাপের প্রতি বরাবরই অবজ্ঞা, উদাসীন মনোভাব এবং নষ্ট করে ফেলার মানসিকতা লক্ষ্য করা যায় দীর্ঘদিন থেকে। তবে এটা নতুন কিছু নয়, আগামীতেও এই প্রচেষ্টা জারি থাকবে। হয়তো মূল ইতিহাসকে মুছে ফেলে নতুন ইতিহাস তৈরীর ভাবনাও হতে পারে। সাম্প্রতিক ও অতীতের কিছু ঘটনা সেই ইঙ্গিতই বহন করে। গৌরবান্বিত, ঐতিহ্যবাহী ইতিহাসকে মুছে ফেলা কি সম্ভব? হয়তো সময়েই এর উত্তর দিবে।
আনুমানিক রাজপ্রাসাদ নির্মাণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই দ্বিতীয় ফটকটি নির্মাণ করা হয়। মূলত রাজকর্মচারীরা রাজদরবারে যাওয়ার জন্য এই প্রবেশদ্বারটি ব্যবহার করতেন। দেবীবাড়ি এই অঞ্চলে ছিল হাতিশাল ও ঘোড়াশাল এবং এই আস্তাবলগুলিকে দেখাশোনার জন্য কিছু কর্মচারী নিযুক্ত ছিল ও তাদের থাকার ঘর ছিল। মহারানীরা কেশবআশ্রম বা রানীর বাগানে যাতায়াতের জন্য এই প্রবেশদ্বার ব্যবহার করতেন। মূল গেটের আদলে তৈরি এই দ্বিতীয় গেটটি যথেষ্ট আকর্ষণীয়। এর কারুকার্য, নির্মাণশৈলী, দুটি পিলারের উপর রাজকীয় ছাপ এখনও বিদ্যমান। এই প্রবেশদ্বারের পশ্চিমে রয়েছে প্রবেশদ্বার পাহারা দেওয়ার রক্ষীদের গম্বুজাকৃতি ছোট কক্ষ। এরকম কক্ষ কুচবিহার জেলায় আর কোথাও দেখা যায় না।









অবহেলা, অনাদর এবং এই কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে এই কক্ষটির সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। এরকম চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম হয়তো জানতেই পারবে না এর ইতিহাস। অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের ফলে প্রবেশদ্বারের পশ্চিমের পিলারকে কয়েকবার ট্রাক দিয়ে আঘাত হেনেছিল, ক্ষত হয়ে গেলেও এর মেরামত করা হয়নি। একবার জেলা প্রশাসন এটাকে সংস্কার করেছিল। রক্ষীদের ঘরের দরজাটি পাকা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লোহার গেটটি উধাও হয়ে গেছে। একেবারে হতশ্রী, করুনঅবস্থা এই ঐতিহাসিক নিদর্শন এর।
প্রশাসনিক তৎপরতা, জনগণের সচেতনতা একান্তই দরকার। এটিকে রক্ষা করা আমাদের আশু কর্তব্য। সবাইকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাই।
Related Posts
Book – কামতাপুরী আন্দোলনের আসল উদ্দেশ্য – কমরেড দীনেশ ডাকুয়া।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ৬ বছর পরেও মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের মূর্তি নির্মাণ হলনা কুচবিহারে।
জন্ম সার্ধশতবর্ষ পর রায় সাহেব ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা: তাঁর আদর্শের মূল্যায়ণ, প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিকতা।