পুষুনা সাংনান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি ও ভোগালী বিহু। Pushuna Sangnanti / Poush Sangkranti / Makar Sangkranti / Bhogali Bihu – পুষুনা সাংনান্তির সাকাল।

পুষুনা খাওয়া ও গরুক ফোঁটা / দাগ দেওয়া
আজি পুষুনা সাংনান্তির (Pushuna Sangnanti) দিনোত খুব সকালে গাও ধোঁয়া, মেলা নাখান পিঠা খাওয়া, ঢিং (Dhing) খাওয়া, জুই পোয়া ও বাড়ির গরুর কপালোত কলার ঢেরা দিয়া ফোঁটা দেওয়ার রীতি। রাজবংশী মানষিলা এই তিনপুরানী মেলা দিনের রীতি এলাও পালে এই দিনোত। এই দিনটাত গ্রামগঞ্জোত ভোরবেলা ঘুম থাকি উঠিয়া ছাওয়া, পোয়া, গাবুর, বুড়া, বুড়ি গাও ধোঁয় নদীত, দিঘিত আর কলোত। তারপরে ঠাকুরের থানোত পূজা দ্যায় তিলুয়া কদম, চাউলের গুঁড়া, সৈরষার ফুল দিয়া। তারপরে আতপ চাইল নুন দিয়া কলার পাতাত ধাপরা পিঠা বানেয়া খায়, আরো গরুক ও খোয়ায়। ফির বাঁশের থোড়াত আতপ চাইল,লবন, মিঠাই পরিমাণ মতো মিশিয়া খ্যাড়ের শিপলা দিয়া জুই ওত ছোবায়। পোড়া হইলে বাঁশ ফাটেয়া ঢিং বাইর করি সগায় খায়।এইলা খাওয়াক পূষূনা খাওয়া কয়।

পূষূনা সাংনান্তির আগের দিন ছাম গাইনোত আতপ চাইল ভুকায়। নিয়ম আছে সাংনান্তির দিন ছাম গাইনের ভুকা চাইলের গুঁড়ার সাথে সৈরষার ফুল একটে মিশিয়া পথমে ঠাকুরের থানোত দেওয়া খায়। তারপরে ঘরের দুয়োরোত, আঙিনা, ধানের গোলাতও দেয়। বাকি আতপ চাইলের গুঁড়া আর সৈরষার ফুল পরে জলোত মিশিয়া গরু, ছাগলের কপালোত, প্যাটোত, পিটিত ফোঁটা দেয়। এই ফোঁটা দেওয়ার মেলা ব্যাখ্যা আছে।
কারো মতে, রাজবংশী মানষিলার primitive tradition / আদিম ঐতিহ্যে ছিলো পশুপালন, তারপর কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতি। তারে খেও এইটা।অনৈমতে, আউস ধানের প্রস্তুতির জৈন্য নয়া হাল শুরু করার বাদে পূষূনা সাংনান্তির দিন কৃষকদের গৃহদেবতা গরুর শিং ওত ত্যাল, ফোঁটা, মালা দেওয়া হয় এবং আড়াইপাক হাল দেওয়া খায়।
আরো কাং কাং কয়, গরু হচ্ছে বিষ্ণু দেবতা, সেইজন্য ও দিন গরুক গাঁও ধোয়েয়া পূজা দেওয়া খায়। আসলে এই নিয়মগুলা মেলাপুরানী, আর এইলার মধ্যে প্রকৃতি উপাসনার একটা নিদর্শন পাওয়া যায় রাজবংশী সমাজোত। তবে জাগা বিশেষে কিছু নিয়মের অগল বগল আছে। আরো এই সমায় দলবান্দিয়া সেশা পিট্টি মারে। ঐ মসোঙ দিয়া ফির বনভোজন। সিঙার ফোক শুনি বাহো মাড়ির যায়।আর এলা ছাড়াত মাছোও নাই, আর সেশাও নাই।



পূষ মাসের আরেকটা উল্লেখযোগ্য পরব আছে।গোটায় মাস ধরি ৬/৭ জোন গাবুর চেংড়া (এলাকা বিশেষ) মাগন করি বেড়ায়। প্রতিদিন সৈঞ্জা বেলা
গোয়ালিঘরের সামনোত যেয়া হৈড্ডানি দেয় “থুয়ে” করি। গৃহস্থরাও এমাক মাগন দেয়। তারপরে সগায়মিলি গান কয়…
“হাইচাওরে মেনি গাই
তোর পসাদে দুধভাত খাই”। (এই “হাইচাওরে” হচ্ছে গোরক্ষনাথের গান। কৃষক সমাজের মূলধন হচ্ছে গরু। তায় গরুর দেবতাক সন্তুষ্ট করার জৈন্য গোরক্ষনাথ ঠাকুরের পূজা করে ।)
নানান নাকান শ্লোক ধরে এক এক করি….
“নাপার পাত ধাপাধাপা
তাক ফেলালুং চাই
হাতি আসিল ঘোড়া আসিল
ফুলমানিকের ভাই।।
ফুলমানিক ফুলমানিক উড়ানি কৈতর
উড়িয়া ঘুড়িয়া পড়ে ওই ম্যান্ডেলের ভিতর।।
ম্যান্ডেলের ভিতর সাতখান নাও
ঐ নাওয়োত চড়িয়া গেইছে গজমতির মাও।
“সত্য ঠাকুর গোরক্ষনাথ
পূজা নেও হৃষ্টে।
ধনে বংশে বারুক গিরি
থাকুক সদা তুষ্টে।”
পুষুনা পরব উপলক্ষে রাজবংশী সমাজের মধ্যেত ধর্মীয় বিশুদ্ধতা ও পৌরাণিক সমাজ জীবনের চিত্র ফুটি ওঠে। হৈই হুল্লোড়, আনন্দ, উদ্দীপনা থাকলেও সৎ পথে চলার একটা ছবি ও নিষ্ঠা দেখা যায়। পুষুনাক কেন্দ্র করি গোরক্ষনাথ এর মাগন আরো দলবান্ধিয়া রাতি বেলা (কাও কাও দিনোত খায়) পূষূনা খাওয়া (বনভোজন) এক মিলনমেলার ছবি। যুগ যুগ ধরে বাঁচি থাকুক এই পরব। সভ্যতার বিকাশোত সমাজ আগে গেইলেও এই রীতিগুলা গ্রামগঞ্জোত এলাও বাঁচি আছে।
Related Posts
কোচরাজবংশী সমাজে নামকরণ উৎসব ও বিভিন্ন নাম।
ও জীৱন ৰে – O Jibon Re – Pratima Pande Barua – গোৱালপৰীয়া লোকগীত 2018
উডল্যান্ডস প্রাসাদ কিভাবে উডল্যান্ডস হসপিটাল হল? Woodlands Palace Kolkata