বিষূয়া – সিঁরুয়া – বেষমা সাংনান্তি। Bishua Sirua Beshma

Mridul Narayan

Writer: Kumar Mridul Narayan

আজি চৈত্র মাসের শ্যাষ দিনটা  উওর পূর্ব ভারতের কুচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর, মালদা, আসাম এবং নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ এর  রাজবংশী-কামতাপুরী মানষিলার এখেনা বিশেষ দিন। যাক কয় বিষূয়া – সিঁরুয়া – বেষমা সাংনান্তি ( Bishua Sirua Beshma)।

এই বিষূয়ার দিনোত বাড়ির বউ গুলা সকাল থাকি ঘরদোর পরিষ্কার করে। লেপামোছা করে বাড়ির ঠাকুরের পাট, আঙিনা, আগদোর বাড়ি।আরো গোবর জল ও ছিটিয়া দেয়, লেপিয়াও দেয়। বাড়ির ব্যাটাছাওয়ালা পিড়া, খড়ম, চৌকি, লাঙ্গল, জোঙাল ও আরো কিছু যন্ত্রপাতি ধুইয়া রৌদত শুকির দেয়। অধিকারী বামন তুলসী গাছের গোড়াত আতপ চাল, দুই , দই, চিনি, কলা দিয়া পূজা দেয়। এছাড়াও মেলা পরব ভৈভৈ করি চলে সারাদিন ধরি –

বিষূয়া – সিঁরুয়া – বেষমা সাংনান্তি / Bishua Sirua Beshma

১) আজিকার দিনোত রাজবংশী মানষিলা খায় তিতা। মেলা নাকান তিতা যেমন নিম পাতা, অর্জুনের বাকল, সুরিমালার ছাল, বাসক পাতা, শুকাতি, সাইতনের ছাল। এটার একটা বৈজ্ঞানিক কারণ আছে, “লোক বিশ্বাস মতে গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়াত ছোঁয়াচে রোগের হাত থাকি মুক্তি পাবার জন্য এই তিতা পাতা খুবই উপকারী”। 

Bishua sirua beshma sangnanti

২) তিতা খাবার পরে প্রত্যেকটা  বাড়ির বড়ো মানষি নানা  নাকানের পাতা (বিষ ঢেকিয়া, বেত বা গাড়ালের পাতা, কোচলোতের পাতা, হলুদের পাতা, গাঁজা, বিসতির গাছ, রসুন বা পিঁয়াজ, পানি মুখারি, বিস্তি, কানসিচা, পুন্ডিগাছের পাতা) একেটে মুঠি করিয়া বাড়ির  ঘরের বারান্দার দুয়ারের উপরাত গুজি দেয়। এইলা দেওয়ার আসোল উদ্দেশ্য হৈল “যাতে করি কোনো অপদেবতার দৃষ্টি বাড়িত না পড়ে।

৩) আজিকার দিনোত আর একটা বিশেষ আকর্ষণ হৈল “আটকালাই-বাটকালাই” (Atkalai Batkalai) বা ভাজাভূজা খাওয়া। রাজবংশী মানষিলার এই দিনোত দুপরা ভাত খায় না। চাল, গম, মটর, তিল, কাঁচা আমের কুঁচি, আদার কুঁচি, পিঁয়াজ, ছোলা একটে ভাজিয়া খায়। খাওয়ার আগোত এইলা তুলসী পাটোত দেয়। ওটি থাকি একমুঠ নিয়া আগোত চোবায় এবং তারপরে ঐলা ফ্যালে দেয়।এটার এখেনা বৈজ্ঞানিক কারণ আছে:- মুকের বিষ বেদনা বির হয়া যায়।

৪) মেলা নাকানের শাক ভাজা পাট, কুমলি, ঢেকিয়া, খুড়িয়া, ঢোলা মানামানি, ক্ষুদি মানামানি, হেলেন্ঙ্চা, গন্ধ পাতা, লাউ কুমড়ার ডান্টি কুললায় একটে ভাজি খায়।

৪) বাড়ির গরু, ভৈষ গিলাক পুকুর, নদীত নিয়া যেয়া গাঁও ধুইয়া দেওয়া হয়। প্রাচীন শাস্ত্র গ্রন্থগুলাত এই দিনোত বাড়ির গরু ভৈষগুলার যত্ন নেওয়া ও পূজা করার কথাও তলতি ধরি আছে।

৫) বাড়ির বেটাছাওয়ালা লাঠি-সোটা-বল্লম ধরি দুপরা বেলা  শিকার করিবার যায়। সেদিন গ্রামের কোন এক পাকে শিকারের নেতৃত্ব দেওয়া মানষিটা “শিঙ্গা” বাজায়, আর এই শিঙ্গার শব্দ শুনিয়ে সগায় দলবদ্ধভাবে শিকারোত বিরায়।এইলাক ফির “বাহো” (Baho) কয়। কামতা- কুচবিহার সাম্রাজ্যের  মহারাজার শিকার যাত্রার  ঐতিহ্য স্মরণ বা মহারাজাদের শিকার যাত্রা মতন বা মহারাজা থেকে সাধারণ প্রজা সগায় দল বান্দি  শিকারত যায় ঐ দিন।

বিষূয়া - সিঁরুয়া - বেষমা সাংনান্তি

৬) শিকার করাটা রাজবংশী- কামতাপুরী মানষিলার বংশজাত এবং বিশেষ করি হিংস্র পশু  শিকার করার বিশেষ কারন ও আছে। দলবদ্ধভাবে শিকার করা একটা ঐক্যের ও মেলবন্ধনের চিত্র। য্যাং করি হোক কোন জন্তু বা পশু শিকার করা খাবে। মোট কথা খালি হাতে বাড়ি আইসা যাবে না। সামনাত যেটায় পরুক  বধ করা খাবে। বনুয়া হাতি, বনুয়া শুয়োর, ভালুক, বাঘ, শেশা, শিয়াল বা যে কোনো হিংস্র পশু।

৭)  আর রাতি বেলা চলে আমিষ খাওয়া। শিকার করা পশুর মসঙ বিশেষ করি শেশা, ঘোদঘোদ, কৈতোর দেশী চড়াই বা অন্য মসঙ খাওয়ার আনন্দ। উৎসবের আকারে পাড়ায় পাড়ায় দলবদ্ধভাবে নাচা গানা, আনন্দ করি বছরের শ্যাষ দিনটা পালন করে। এমন করিয়া সারাটা দিন এই বিষূয়া-শিরুয়া-বেষমা সাংনান্তি পালা হয়।

রাজবংশী কামতাপুরী (Rajbanshi Kamatapuri) মানষিলার এই বিষুয়া পরবটি মূলত কৃষি কেন্দ্রিক মুখ্য এখেনা অনুষ্ঠান। কিন্তু এই পরবটির সাথোত বিশ্বকর্মা পূজার মেলা মিল (মৌলিক সাদৃশ্য ) দেখা যায়।আধুনিকতার সাথোত হামরা সম্পৃক্ত হৈলেও এলাও গ্রাম গঞ্জোত হই হই, ভৈ ভৈ করি এই বিষুয়া পরব পালন করে রাজবংশী-কামতাপুরী মানষিলা। এছাড়াও গ্রামগঞ্জের অন্য মানষিলাও রাজবংশী মানুষিগুলার এই পরব টাক অনুসরণ করে। এমন করি বাঁচি থাকুক কুচবিহারি/ হামার মানষিলার কৃষ্টি কালচার। পুরুষ কেন্দ্রিক এই উৎসবের রেওয়াজ এলাও পালি চলিছে  ঘরে ঘরে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *